দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্মদিন দিন আজ। জীবনের ৩৯ বসন্ত পার করে ৪০তম বছরে পা দিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক। ১৯৮৩ সালের আজকের দিনে নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে মহিষখোলা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার।
নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় সুমনা হক সুমির সঙ্গে পরিচয় হয় মাশরাফির বিন মর্তুজা। সেই সূত্রেই পরিণয় অতঃপর ২০০৬ সালে বিয়ে। তাদের ঘর আলোকিত করেছে এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের নাম হুমায়রা ও ছোট ছেলের নাম সাহেল। কাকতালীয়ভাবে ২০১৪ সালের আজকের এই দিনে মাশরাফির পুত্র সাহেলেরও জন্ম হয়।
গতিময় ও আক্রমণাত্মক বোলিং দিয়ে অনূর্ধ-১৯ দলে থাকতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন ম্যাশ। অ্যান্ডি রবার্টস তখন অনূর্ধ-১৯ দলের অস্থায়ী বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এরপরে রবার্টসের পরামর্শেই মাশরাফিকে বাংলাদেশ এ-দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দলের হয়ে একটি ম্যাচ সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলে। ২০০১ সালের নভেম্বরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক মাশরাফির। ড্র হওয়া সে ম্যাচে বৃষ্টির কারণে শেষ দুইদিনের খেলা মাঠে গড়ায়নি। তবে জিম্বাবুয়ের একমাত্র ব্যাটিং করা ইনিংসে শিকার করেন ৪ উইকেট। একই বছরের ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে নড়াইল এক্সপ্রেস জানান দেন দেশের ক্রিকেটে আগমন ঘটেছে এক লম্বা রেসের ঘোড়ার।
ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় হাঁটুতে চোট পান ম্যাশ। ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে যায় মূল্যবান দুইটি বছর।
২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ইনজুরি কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরেন। দীর্ঘ বিরতিতে যে তার বলে ধার বিন্দুমাত্র কমেনি রাহুল দ্রাবিড়কে অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বলে আউট করে জানান দেন এই কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার। একই সিরিজে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে হন ম্যাচসেরা।
ক্যারিয়ার জুড়েই ইনজুরির সাথে লড়াই করা ম্যাশ ২০১১ সালে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে তারই নেতৃত্ব দেশের ক্রিকেট পৌঁছে এক অনন্য উচ্চতায়। সে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। বিতর্কিত এক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় টাইগাররা। সে ম্যাচে আম্পায়ারদের বিরুদ্ধাচরণের শিকার না হলে হয়তো দলকে নিয়ে যেতেন আরো অনেক দূর।
বিশ্বকাপের পর তারই নেতৃত্বে টানা তিন সিরিজ জিতে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াস করার পর বিশ্বকাপে বিতর্কিতভাবে হেরে যাওয়া ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজও জিতে নেয়। এরপর পরের সিরিজে টানা জয়ে উড়তে থাকা টাইগারদের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থান ছিল তার নেতৃত্বাধীন সময়ে। দশ বছর পর তার আমলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মেয়াদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে তিনি এনে দিয়েছিলেন অভাবনীয় সাফল্য।
ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর আগেই যোগ দিয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিতে, সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে হয়েছেন নিজ জন্মস্থানের সংসদ সদস্য। ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় রেখে চলেছেন বিচক্ষণতার স্বাক্ষর। নতুন এ পরিচয়ে সময় দিতে গিয়ে এখন ক্রিকেট থেকে খানিক দূরেই রয়েছেন মাশরাফি। তবে দেশের মানুষের কাছে সবসময়ই তার প্রথম পরিচয় শত আঘাত সহ্য করে দেশের জন্য খেলে যাওয়া লড়াকু এক ক্রিকেটার হিসেবে।