মুশফিক-রিয়াদপত্মীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে নাখোশ বিসিবি

শনিবার সকালে এশিয়া কাপের জন্য ১৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সেই দলে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গা হয়নি। এর রেশ পৌঁছে গেছে রিয়াদের শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত। ভগ্নিপতির বাদ পড়া নিয়ে মুশফিকুর রহিমের স্ত্রী জান্নাতুল কেফায়াত মন্ডি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। পরে রিয়াদের স্ত্রী জান্নাতুল কাওসার মিষ্টিও আবেগঘন স্ট্যাটাসে স্বামীকে অবহেলা করার কথা লিখেছেন। দুটি স্ট্যাটাসই বিসিবি কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে। প্রমাণ হিসেবে স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে।

জাতীয় দলের ক্রিকেটারপত্নীদের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে মাঝেমধ্যেই বিব্রত হতে হয় বিসিবিকে। গত শনিবার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্ত্রীর ফেসবুকে দেওয়া দুটি স্ট্যাটাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরগরম। রিয়াদকে এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ দেওয়ায় প্রতিবাদী প্রতিক্রিয়া দেন দুই বোন জান্নাতুল কেফায়াত মন্ডি ও জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি। 

রিয়াদের বাদ পড়াকে অবিচার আর অবহেলা হিসেবে দেখছেন তারা। জাতীয় দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের স্ত্রীদের স্ট্যাটাস বিসিবি ও জাতীয় দল নির্বাচকদের বিরুদ্ধে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিসিবি কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী কোনও ক্রিকেটার বা তাদের পরিবারের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। এই শর্ত মেনে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা কেন্দ্রীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বলে দাবি তাদের। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের সতর্ক করার চিন্তা বিসিবির।

বিসিবি, জাতীয় দল, জাতীয় নির্বাচক প্যানেল বা খেলোয়াড়দের সুনাম ক্ষুণ্ন করে বা তাদের বিরুদ্ধে যায় প্রকাশ্যে এমন কোনও মন্তব্য করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিতে পারবেন না চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটার এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। ক্রিকেটাররা চুক্তির শর্ত মানলেও তাদের পত্নীরা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন না। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তারকা ক্রিকেটারদের পত্নীরা প্রতিবাদী হচ্ছেন ফেসবুকে। মুশফিকের স্ত্রী মন্ডি ও রিয়াদের স্ত্রী মিষ্টি এই প্রথম বিসিবিকে ইঙ্গিত করে স্ট্যাটাস দেননি। 

বোর্ড বা নির্বাচকদের কোনও সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে এর আগেও স্ট্যাটাস দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তারা। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরও পিছিয়ে নেই। যদিও শিশিরের স্ট্যাটাস বিসিবি, জাতীয় দল নির্বাচকদের বিরুদ্ধে ছিল না। তিনি স্বামীর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিকেটারকে ইঙ্গিত করে পরোক্ষে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তারকা ক্রিকেটারদের স্ত্রীদের এ ধরনের স্ট্যাটাস বিব্রতকর এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থি বলে অভিহিত করেন বিসিবির একাধিক পরিচালক। অবশ্য ক্রিকেটাররা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারেন বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি পরিচালকদের কেউই। 

মুশফিক-রিয়াদের স্ত্রীরা প্রতিক্রিয়া জানালেও বিভিন্ন সময় বিতর্কেও নীরব থাকেন অনেক ক্রিকেটারের স্ত্রী। এদিক থেকে বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবালের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা উদাহরণ হতে পারেন। তামিমের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনদিনও স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়নি তাকে।

বিসিবির একজন পরিচালক বলেন, আসলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে সবাই জড়াচ্ছেন না। আমরা আশা করব, ক্রিকেটাররা তাদের পরিবারের সদস্যদের এ ব্যাপারে সচেতন করবেন। কারণ বিষয়গুলো কারও জন্যই স্বস্তিকর নয়। আসলে ক্রিকেটাররা আন্তরিক না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচালক বলেছেন, ‘যেহেতু চুক্তিতে একটি শর্ত রয়েছে এবং খেলোয়াড়রা তা জানেন। মৌখিকভাবে হলেও এ ব্যাপারে ক্রিকেটারদের সতর্ক করা হবে। বিষয়টি শৃঙ্খলা বিভাগ দেখবে।’

এ বিষয়ে বিসিবি শৃঙ্খলা বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ সোহেলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীকেও মুঠোফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।