ঐতিহাসিক ম্যাচে টাইগারদের মান রক্ষা

ভারতে চলমান বিশ্বকাপে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও টানা ছয়টি ম্যাচ হেরে যেন নিজেদের খুঁজে ফিরছিল টাইগাররা। অবশেষে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক পিচে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্য ৭ উইকেটে ৪১.০ ওভারে তাড়া করে ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় সাকিব বাহিনী।

শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৮০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি টাইগারদের। ব্যাট হাতে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও ম্যাচের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই মধুশঙ্কার বলে নিশাঙ্কার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন তামিম। আউট হওয়ার আগে ৫ বলে নয় রান করেন এই ব্যাটার।

তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন বিশ্বকাপ জুড়েই নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর লিটনের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে ভালই ব্যাটিংয়ে ভালই এগোচ্ছিল লিটন-শান্ত জুটি। তবে দলীয় ৪১ রানে ব্যাক্তিগত ২৩ রানে লিটন ফিরলে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর ক্রিজে আসেন টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। তাকে সঙ্গ দিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেন শান্ত। ১৬৯ রানের জুটি গড়ার পথে দুজনই তুলে নেন ফিফটি। ৩২তম ওভারে ম্যাথিউজের স্লোয়ারে ৮২ রানে সাজঘরে ফিরেন সাকিব। এরপর সেঞ্চুরির পথে থাকা শান্তও নার্ভাস নাইন্টিতে ম্যাথিউজের শিকার হয়ে ফিরলে কিছুটা শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব-শান্তর বিদায়ের পর মুশফিকও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। মাত্র দশ রান করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মুশফিকের বিদায় রিয়াদের সাথে জুটি বাঁধেন তৌহিদ হৃদয়। ব্যক্তিগত ২২ রানে এক নিচু হয়ে আসা এক বলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে বিদায় নেন মিস্টার ফিনিশার রিয়াদ। রিয়েদের পর ক্রিজে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মাত্র ৩ রানে লং অফের উপর দিয়ে ছয় মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে দ্রুতই ফিরেন এই অলরাউন্ডার। এরপর ক্রিজে আসেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তানজিম সাকিব। অষ্টম উইকেট জুটিতে ১৩ রান তুলে নিয়ে ৮.৫ ওভার হাতে রেখেই দলকে জিতে মাঠ ছাড়েন তৌহিদ হৃদয় এবং তানজিদ সাকিব।

৩ উইকে শিকার করে লঙ্কানদের সেরা বোলার দিলশান মাদুসান। এছাড়াও থিকসানা ও ম্যাথিউস ২টি করে উইকেট তুলে নেন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেনি লঙ্কানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কুশল পেরেরার উইকেট তুলে নেন শরিফুল। ওভারের শেষ বলে মুশফিকের অসাধারণ মাত্র ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন লঙ্কান এই ব্যাটার।

তবে শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লঙ্কানদের এগিয়ে নিতে থাকেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। এই দুই ব্যাটারের দৃঢ়তায় প্রথম পাওয়ার প্লেতে আর কোনও উইকেট হারায়নি লঙ্কানরা। ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা এই জুটি ভাঙেন টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। ১৯ রান করে দলীয় ৬৬ রানে সাজঘরে ফিরেন লঙ্কান দলপতি। অধিনায়কের বিদায়ের পর দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন নিশাঙ্কাও। দলীয় ৭২ রানে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তানজিম সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৪১ রান। নিশাঙ্কার বিদায়ে দলের হাল ধরেন চারিথ আসালঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা।

দুই মিডেল অর্ডার ব্যাটার মিলে চড়াও হন বাংলাদেশের বোলারদের উপর। ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠা জুটি ২৫তম ওভারে ভাঙতে আবারও ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন অধিনায়ক সাকিব। দলীয় ১৩৫ রানে ৪২ বলে ৪১ রান করা সাদিরা সাজঘরে ফিরলে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। একই ওভারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে ক্রিকেট বিশ্ব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড আউট হয়ে কোনও বল না খেলেই সাজঘরে ফিরেন ম্যাথিউস। যে হেলমেট নিয়ে ক্রিজে আসেন সেটি নিয়ে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলেন তিনি। ফলে আরেকটি হেলমেট আনা হয় তার জন্য, কিন্তু সেটিও উপযুক্ত মনে করেননি এই ব্যাটার। ব্যাটিং শুরুর আগেই অতিরিক্ত সময় অতিক্রান্ত করায় টাইগার অধিনায়ক সাকিব আবেদন করলে আম্পায়াররা টাইমড আউট ঘোষণা করেন ম্যাথিউসকে।

দলীয় ১৩৫ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটলেও দলের রানের চাকা সচল রাখেন চারিথ আসালঙ্কা। শেষ দিকে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও মাহিথ থিকসানাকে সঙ্গে নিয়ে আসালঙ্কার দৃঢ়তায় লড়াই করার মত পুঁজি পায় লঙ্কানরা। দলকে ২৭৯ রানের পুঁজি এনে দেওয়ার পথে ১০৫ বলে ১০৮ রান করেন আসালঙ্কা।

টাইগারদের হয়ে ৮০ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ২টি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান এবং শরিফুল ইসলাম। ৬৫ বলে ৮২ রান এবং ৫৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।